২৫টি শীতকালে মায়ের যত্নের সেরা টিপস
২৫টি শীতকালে মায়ের যত্নের সেরা টিপস
শীতকাল আমাদের অনেকেই খুব ভালোবাসি। কিন্তু এই সময়ে মায়েদের শারীরিক ও মানসিক যত্নে একটু বাড়তি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে ত্বক, চুলের সমস্যা, ঠান্ডা, খুসখুসে ত্বক ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই সময়ে কিছু বিশেষ যত্নের প্রয়োজন, যা মায়েদের স্বাস্থ্য ও সুন্দর থাকতে সাহায্য করবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালে মায়েদের যত্নের কিছু সহজ ও কার্যকর টিপস।
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শীতে আমাদের পানির তৃষ্ণা কমে যায়, কিন্তু শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এই সময়ও পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
২. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
শীতে ত্বক ও শরীরের শক্তি ধরে রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালীন সবজি, যেমন- গাজর, পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি খেলে ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণ হয়। পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, যেমন- কমলা, মালটা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৩. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, তাই ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। স্নানের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক কোমল থাকবে।
৪. সঠিক পোশাক পরিধান
শীতের ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে উষ্ণ কাপড় পরিধান করুন। তবে খুব ভারী পোশাক পরার প্রয়োজন নেই, বরং স্তরযুক্ত হালকা উলের কাপড় পরলে উষ্ণতা বজায় থাকে এবং ত্বকেও শ্বাস নিতে পারে।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম
শীতকালে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৬. ত্বক ও চুলের বিশেষ যত্ন
শীতে ত্বক ও চুলের সমস্যা বেশি দেখা যায়, তাই সপ্তাহে একদিন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে মুখ ও চুলের যত্ন নিন। নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করলে ত্বক ও চুল উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর থাকবে।
৭. হালকা ব্যায়াম
শীতে শরীরকে ফিট রাখতে হালকা ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকালে সূর্যের আলোতে একটু হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং শীতের ক্লান্তি দূর হয়।
আরো পড়ুনঃ ভ্রূণের মৃত্যু হলে কতক্ষণে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে
শীতকালীন এসব যত্ন মায়েদের স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় রাখতে সাহায্য করবে। শীতের উপভোগ করতে মায়েদের অবশ্যই এই যত্নগুলো নেওয়া উচিত।
৮. ঠান্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধে সাবধানতা
শীতে ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি বা ফ্লু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরা, হাত ভালোভাবে ধোয়া এবং অন্যের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। এছাড়া, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা এই ধরনের অসুখ থেকে রক্ষা করতে পারে।
৯. গরম পানিতে গোসল এড়িয়ে চলুন
অনেকেই শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করেন। তবে খুব বেশি গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দিতে পারে, ফলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। তাই হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করার চেষ্টা করুন এবং স্নানের পর ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
১০. ঠোঁটের যত্ন নিন
শীতে ঠোঁট শুষ্ক ও ফাটতে পারে, যা খুবই অস্বস্তিকর। তাই নিয়মিত লিপ বাম ব্যবহার করুন এবং ঠোঁটের জন্য বিশেষ যত্ন নিন। বাজারে অনেক ধরনের হাইড্রেটিং লিপ বাম পাওয়া যায়, তবে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন নারিকেল তেল বা মধু ব্যবহার করলেও ঠোঁটের শুষ্কতা দূর হয়।
১১. দুধ ও মধু দিয়ে ত্বকের যত্ন
শীতে ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল রাখতে দুধ ও মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। এক চামচ দুধ ও এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করবে এবং মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
১২. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
শীতকালে দিনের আলো কম থাকে, যা অনেকের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই সময়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। দিনের আলোতে কিছুটা সময় কাটানো, প্রিয়জনের সাথে কথা বলা এবং নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
১৩. গরম পানীয় গ্রহণ করুন
শীতকালে গরম পানীয় যেমন আদা চা, তুলসী চা, লেবু পানি ইত্যাদি শরীরকে গরম রাখে এবং ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা দেয়। এগুলো শুধু শরীরকে গরমই রাখে না, বরং এদের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
১৪. ঘরের পরিবেশ উষ্ণ রাখুন
শীতে ঘর ঠান্ডা হলে ত্বক ও শরীরের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই ঘরের পরিবেশ উষ্ণ রাখতে হিটার ব্যবহার করুন অথবা জানালা দরজা বন্ধ রাখুন। তবে খেয়াল রাখুন যেন ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
১৫. হাত ও পায়ের যত্ন
শীতকালে হাত ও পা বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করা যায়। রাতে ঘুমানোর আগে হাত ও পায়ে নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল বা ভালো মানের ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখবে এবং শীতকালে হাত-পা ফাটা প্রতিরোধ করবে।
১৬. ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখুন
শীতকালে ঘর বেশিরভাগ সময় শুষ্ক থাকে, যা ত্বকের শুষ্কতা ও খুশকির সমস্যা বাড়ায়। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ঘরের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে।
১৭. নিয়মিত স্নান করুন, তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য
শীতকালে অনেকে দীর্ঘ সময় গরম পানি দিয়ে স্নান করতে পছন্দ করেন, কিন্তু এটি ত্বকের শুষ্কতা বাড়ায়। তাই প্রতিদিন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্নান করুন এবং হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং ত্বক কোমল থাকবে।
১৮. প্রাকৃতিক মুখ প্যাক ব্যবহার করুন
শীতকালে ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা অত্যন্ত উপকারী। একটি সহজ ঘরোয়া মুখ প্যাক হলো মধু, দই এবং হলুদ মিশিয়ে মুখে লাগানো। এটি ত্বকের শুষ্কতা কমায় এবং উজ্জ্বলতা আনে। সপ্তাহে অন্তত একবার এই ধরনের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
১৯. নিজের জন্য একটু সময় রাখুন
শীতকাল অনেকের জন্য ব্যস্ততার সময় হতে পারে, তবে নিজের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন, বই পড়ুন, মুভি দেখুন বা ধ্যান করুন। মানসিক প্রশান্তি শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, এবং নিজেকে ভালো রাখার জন্য একটু সময় বের করাই সবচেয়ে বড় যত্নের অংশ।
আরো পড়ুনঃ গর্ভে ১৩ সপ্তাহের ভ্রূণ মারা গেলে কতক্ষণ পর প্রসব হয়? সম্পূর্ণ গাইডলাইন
২০. ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন
শীতকালে অনেকেই বিষণ্ণতা অনুভব করেন, যা শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা এবং পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো শীতের ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। ইতিবাচক চিন্তা মানসিক চাপ কমায় এবং মনের প্রশান্তি আনে।
২১. ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ঘরের গাছ রাখুন
শীতকালে ঘরের আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। ঘরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং বাতাস পরিশুদ্ধ রাখতে ঘরে কিছু গাছ রাখতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যালোভেরা, মানি প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট ইত্যাদি গাছ ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং শীতল আবহাওয়ায় ত্বক ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কমাতে সহায়ক।
২২. ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান ত্বকের শুষ্কতা ও শরীরের আর্দ্রতা হ্রাস করতে পারে। শীতে শরীর শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা মায়েদের ত্বক ও শরীরের জন্য ভালো। এছাড়া, ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল করে।
২৩. শীতকালীন সবজি ও ফল খান
শীতে বাজারে অনেক ধরনের পুষ্টিকর সবজি ও ফল পাওয়া যায়, যেমন- ব্রকলি, গাজর, কমলা, মাল্টা, বিট ইত্যাদি। এসব খাবার ত্বক ও শরীরের পুষ্টি জোগায় এবং আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এসব ফল ও সবজিতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২৪. ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
শীতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে হাতের ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। তাই খুব প্রয়োজন না হলে স্যানিটাইজার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন এবং পরিবর্তে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার চেষ্টা করুন। এতে হাতের ত্বক শুষ্ক হবে না এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
২৫. স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখুন
শীতকালে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে শরীর সুস্থ থাকে এবং শীতের প্রভাব সহজে পড়ে না। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা শুধু শীতকালে নয়, বরং সারা বছর ধরে মায়েদের ভালো রাখতে সহায়ক।
আরো পড়ুনঃ কি কারণে শিশুরা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়: কারণ ও প্রতিকার
উপসংহার
শীতকাল মায়েদের জন্য একটু বিশেষ যত্ন নেওয়ার সময়। সহজ কিছু যত্নের মাধ্যমে শরীর, ত্বক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া সম্ভব। শীতের শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচতে এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো মায়েদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীতকাল উপভোগ করতে এই যত্নগুলো মেনে চললে শীতের প্রতিটি দিনই হয়ে উঠবে আরামদায়ক ও সুস্থ।
ইভিনিং বিডিতে কমেন্ট করুন
comment url