গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট আসার লক্ষণ ও তা বুঝতে করণীয়

গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট আসার লক্ষণ ও তা বুঝতে করণীয়

গর্ভাবস্থা প্রতিটি মায়ের জন্য একটি বিশেষ সময়। এই সময়ে শিশুর বিকাশের প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভে শিশুর হার্টবিট প্রথম শুনতে পাওয়া একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। এটি শুধুমাত্র একটি আবেগপূর্ণ অভিজ্ঞতা নয়, বরং শিশুর সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট কিভাবে বুঝবেন, কখন এটি আসা শুরু হয়, এবং কীভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করবেন।

গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট আসার লক্ষণ ও তা বুঝতে করণীয়

শিশুর হার্টবিট কবে থেকে আসা শুরু হয়?

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, শিশুর হৃদপিণ্ডের গঠন শুরু হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার ৫ থেকে ৬ সপ্তাহে শিশুর হার্টবিট তৈরি হতে শুরু করে। তবে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এই হার্টবিট শোনা যায় প্রায় ৬ থেকে ৭ সপ্তাহে।

পোস্ট সুচিপত্রঃহার্টবিট শুরু হওয়ার সময় নির্ভর করে গর্ভাবস্থার সঠিক সময়কাল এবং আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের সংবেদনশীলতার উপর। কিছু ক্ষেত্রে ৮ সপ্তাহ পর্যন্তও সময় লাগতে পারে।

হার্টবিট বুঝতে পেরেছি কিনা, তা কীভাবে নিশ্চিত হবো?

শিশুর হার্টবিট অনুভব করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি:

  1. আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা:
    গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, বিশেষ করে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে, চিকিৎসক সাধারণত ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুর হার্টবিট পরীক্ষা করেন। এতে গর্ভে শিশুর হার্টবিট স্পষ্ট শোনা যায়।

  2. ডপলার ডিভাইস ব্যবহার:
    ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের পর, চিকিৎসক ফিটাল ডপলার নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করে শিশুর হার্টবিট পরীক্ষা করেন। এটি ত্বকের ওপর দিয়ে একটি মৃদু শব্দ তরঙ্গ পাঠায় এবং শিশুর হৃদস্পন্দন শোনায়।

  3. মায়ের শারীরিক অনুভূতি:
    কিছু মায়ের ক্ষেত্রে, শিশুর হার্টবিট সরাসরি অনুভব করা না গেলেও পেটের নড়াচড়া বা অনুরূপ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

হার্টবিট না শোনা গেলে কী করবেন?

গর্ভাবস্থার শুরুতে হার্টবিট শোনা না গেলে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এটি নির্ভর করে গর্ভাবস্থার সঠিক সময়কাল ও যন্ত্রের কার্যক্ষমতার উপর। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করা যেতে পারে:

  • গর্ভাবস্থার সঠিক তারিখ।
  • শিশুর অবস্থান।
  • পরবর্তী আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা।

শিশুর হার্টবিট সুস্থ রাখার উপায়

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গর্ভাবস্থায় মায়ের জীবনধারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পরামর্শ:

  1. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ:
    ফল, শাকসবজি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার শিশুর হৃদপিণ্ডের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

  2. পর্যাপ্ত বিশ্রাম:
    পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম মায়ের শরীর এবং শিশুর সুষম বিকাশ নিশ্চিত করে।

  3. ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন:
    এগুলো শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

  4. চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা:
    নিয়মিত প্রাকৃতিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে শিশুর হার্টবিট এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

শিশুর হার্টবিটের হার সম্পর্কে জানুন

গর্ভাবস্থার বিভিন্ন সময় শিশুর হৃদস্পন্দনের গতি ভিন্ন হতে পারে:

  • ৬ থেকে ৮ সপ্তাহে: ১১০-১২০ বার প্রতি মিনিট।
  • ৯ থেকে ১০ সপ্তাহে: ১৭০ বার প্রতি মিনিট পর্যন্ত।
  • ১৪ সপ্তাহের পর: ১২০-১৬০ বার প্রতি মিনিট।

হার্টবিটের হার খুব বেশি বা কম হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।

গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্টবিট পর্যবেক্ষণ

গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে শিশুর হার্টবিট স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করা যায়। এর জন্য কিছু কার্যকর পরামর্শ:

  1. যোগব্যায়াম এবং ধ্যান:
    নিয়মিত যোগব্যায়াম ও ধ্যান গর্ভবতী মায়ের মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে প্রশান্ত রাখতে সাহায্য করে।

  2. পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাপোর্ট:
    পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক স্বস্তি এনে দেয়। গর্ভাবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে চাপ কমানো যায়।

  3. ইতিবাচক চিন্তা:
    সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী থাকা মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

  4. নিয়মিত হাঁটা:
    চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা হাঁটা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, যা শিশুর হার্টবিট নিয়মিত রাখতে সহায়ক।

আরো পড়ুনঃ রেটিনয়েড ব্যবহারে গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি: কীভাবে শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করবেন?

হার্টবিট এবং গর্ভাবস্থার বিভিন্ন জটিলতা

কিছু ক্ষেত্রে শিশুর হার্টবিট সম্পর্কে অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে। এটি গর্ভাবস্থার বিভিন্ন জটিলতার ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন:

  1. হার্টবিট কম শোনা:
    গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে হার্টবিট কম শোনা অস্বাভাবিক নয়। তবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে হার্টবিট কম হলে এটি একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।

  2. অনিয়মিত হার্টবিট:
    শিশুর হার্টবিট অনিয়মিত হলে তা প্রায়শই সাময়িক হয়। তবে এ ধরনের সমস্যায় চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

  3. হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়া:
    দুঃখজনকভাবে কিছু ক্ষেত্রে শিশুর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি সাধারণত মিসক্যারেজ বা অন্যান্য জটিলতার কারণে হতে পারে।

এই ধরনের সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

হার্টবিট পর্যবেক্ষণের জন্য সেরা প্রযুক্তি

বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট পর্যবেক্ষণ আরও সহজ হয়েছে।

  1. ফিটাল মনিটরিং অ্যাপ:
    কিছু স্মার্টফোন অ্যাপ ডপলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে মায়েদের বাড়িতে বসেই শিশুর হার্টবিট শোনার সুযোগ দেয়। তবে এটি ব্যবহারে সাবধান থাকা উচিত এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

  2. আধুনিক আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র:
    উন্নতমানের আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং স্পষ্টভাবে শিশুর হার্টবিট পর্যবেক্ষণ সম্ভব।

  3. পোর্টেবল ফিটাল ডপলার ডিভাইস:
    বাজারে অনেক পোর্টেবল ডপলার ডিভাইস রয়েছে যা মায়েরা বাড়িতেও ব্যবহার করতে পারেন। তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের অনুমতি নেওয়া উচিত।

হার্টবিটের ওপর মায়ের সুস্থতার প্রভাব

মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সরাসরি শিশুর হার্টবিট এবং সামগ্রিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। তাই মায়ের সুস্থতার দিকে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

  1. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
    রক্তচাপ, ব্লাড সুগার ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

  2. ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট:
    গর্ভাবস্থায় ফোলিক অ্যাসিড, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ শিশুর হৃদপিণ্ডের সঠিক বিকাশে সহায়ক।

  3. পর্যাপ্ত জলপান:
    পর্যাপ্ত পানি পান মায়ের শরীর হাইড্রেটেড রাখে এবং শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

শিশুর হার্টবিটের গুরুত্ব গর্ভাবস্থায়

শিশুর হার্টবিট শুধু একটি শারীরিক প্রক্রিয়া নয়, এটি গর্ভাবস্থার অগ্রগতি এবং শিশুর বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। শিশুর হার্টবিট শোনা মায়ের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস এবং আশার সঞ্চার ঘটায়। এটি গর্ভাবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং চিকিৎসকরা এর মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন।

শিশুর বিকাশ পর্যবেক্ষণ

শিশুর হার্টবিট স্বাভাবিক থাকলে বোঝা যায় যে শিশুর হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করছে এবং গর্ভের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন হচ্ছে। এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্যগত সমস্যার ইঙ্গিত

শিশুর হার্টবিট যদি খুব ধীর বা খুব দ্রুত হয়, তবে এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্লাসেন্টার কার্যকারিতা বা গর্ভের অভ্যন্তরে শিশুর অক্সিজেনের অভাব সম্পর্কেও এটি সতর্ক সংকেত দিতে পারে।

গর্ভধারণের স্থায়িত্বের সনাক্তকরণ

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক সময়ে শিশুর হার্টবিট শোনা গর্ভধারণের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা প্রায়ই এটি মিসক্যারেজের সম্ভাবনা কম আছে কিনা তা নির্ধারণে ব্যবহার করেন।

গর্ভাবস্থায় হার্টবিটের সঙ্গে সংযুক্ত আবেগ

শিশুর হার্টবিট শোনা শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের একটি অংশ নয়, এটি মায়ের জন্য আবেগপূর্ণ একটি অভিজ্ঞতা। প্রথমবার হার্টবিট শোনার মুহূর্ত অনেক মায়ের কাছে স্মরণীয়। এই মুহূর্তে তারা অনুভব করেন যে তাদের শিশুটি সত্যিই জীবন্ত এবং সুস্থ।

পরিবারের আবেগীয় সংযোগ

শিশুর হার্টবিট শোনা শুধু মায়ের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্য একটি আনন্দের মুহূর্ত। বাবা, দাদা-দাদী এবং অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা এই মুহূর্তে শিশুর সঙ্গে একটি বিশেষ আবেগীয় সংযোগ অনুভব করেন।

মায়ের মানসিক শান্তি

গর্ভাবস্থায় মায়ের মধ্যে অনেক চিন্তা এবং উদ্বেগ কাজ করে। শিশুর হার্টবিট স্বাভাবিক শুনতে পেলে এটি মায়ের মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং তার মনোবল বাড়ায়।

গর্ভাবস্থার পরে শিশুর হার্টবিট পরীক্ষা

শিশুর জন্মের পরও হার্টবিট পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। নবজাতকের ক্ষেত্রে হার্টবিট সাধারণত প্রতি মিনিটে ১২০ থেকে ১৬০ বার হয়।

নিয়মিত চেকআপ

নবজাতকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং হার্টবিট পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করে যে শিশুর শারীরিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে। চিকিৎসকরা এটি বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক লক্ষণ নির্ধারণে ব্যবহার করেন।

হার্টের সমস্যার আগাম সতর্কতা

শিশুর হার্টবিট অস্বাভাবিক হলে এটি হার্টের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

মায়ের এবং শিশুর মধ্যে অদৃশ্য বন্ধন

গর্ভাবস্থার সময় শিশুর হার্টবিট মায়ের সঙ্গে তার বিশেষ বন্ধনের একটি প্রতীক। মায়ের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস, খাদ্য গ্রহণ এবং আবেগ শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে। হার্টবিট কেবল শিশুর সুস্থতার প্রমাণ নয়, বরং মায়ের জীবনের অংশ হিসেবেও এটি অনুভূত হয়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বমি কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে আবার শুরু হয় কেন?

এই বন্ধন গর্ভাবস্থার পরে আরও গভীর হয় এবং শিশুর জন্মের পর মায়ের স্নেহ ও যত্নে প্রতিফলিত হয়।

গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের ভূমিকা

শিশুর হার্টবিট স্বাভাবিক এবং সুস্থ রাখতে মায়ের জীবনযাত্রা এবং অভ্যাসের বড় ভূমিকা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ভালোভাবে হয়।

পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম

গর্ভাবস্থায় মায়ের পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতের ঘুম ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা এবং দিনের বেলা প্রয়োজনে কিছু সময় বিশ্রাম নিলে শরীর রিল্যাক্স থাকে। এটি রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে, যা শিশুর হার্টবিট নিয়ন্ত্রণে রাখে।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ অপরিহার্য। যেমন:

  • ফল ও সবজি: ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ।
  • প্রোটিন: ডাল, ডিম, মাছ বা মাংস শিশুর হার্টের গঠনে সহায়ক।
  • ফোলেটসমৃদ্ধ খাবার: এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এবং হৃদপিণ্ডের বিকাশে সাহায্য করে।

মানসিক চাপ এড়ানো

গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ এড়ানো জরুরি। অতিরিক্ত চাপ শিশুর হৃদস্পন্দনে প্রভাব ফেলতে পারে। মেডিটেশন, হালকা গান শোনা বা ভালো বই পড়া মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যক্রম

চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা গর্ভাবস্থার জন্য উপকারী। এটি রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং শিশুর হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে।

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ

নিয়মিত প্রাকৃতিক পরীক্ষা

মায়ের ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় আলট্রাসাউন্ড, রক্ত পরীক্ষা এবং অন্যান্য পরীক্ষা করেন, যা শিশুর হার্টবিট পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ

গর্ভাবস্থায় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এমনকি মায়ের কোনো প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকলেও দ্রুত পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রসবের জন্য প্রস্তুতি

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে চিকিৎসকের সঙ্গে ডেলিভারির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। শিশুর হার্টবিট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এ সময়েও গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর জন্মের পর হার্টবিট এবং সঠিক যত্ন

শিশুর জন্মের পরও তার হৃদস্পন্দন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করে।

শিশুর খাবার ও পুষ্টি

মায়ের বুকের দুধ শিশুর হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ বিকাশে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম

শিশুর জন্মের পর পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। শিশুর ঘুমের সময় তার হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুনরুজ্জীবিত হয়।

ডাক্তারের পরামর্শে চেকআপ

নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিকিৎসকের নিয়মিত চেকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হার্টবিট, ওজন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ করা শিশুর বিকাশ নিশ্চিত করে।

মায়ের আবেগ এবং শিশুর ভালোবাসা

শিশুর জন্ম মায়ের জীবনে একটি বিশেষ অধ্যায়ের সূচনা করে। শিশুর হার্টবিট শোনা থেকে শুরু করে তার প্রতিটি মুহূর্ত মায়ের জন্য অমূল্য। মায়ের ভালোবাসা, যত্ন এবং সঠিক যত্ন শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে অবদান রাখে।

প্রতিটি মা এবং শিশু একে অপরের সঙ্গে অদৃশ্য এক বিশেষ বন্ধনে আবদ্ধ। মায়ের প্রতিটি প্রচেষ্টা তার সন্তানের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করে।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের করণীয় ও যত্ন নেওয়ার পরিপূর্ণ গাইড

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় শিশুর হার্টবিট পর্যবেক্ষণ করা মায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এটি শুধু শিশুর সুস্থতার বিষয়ই নয়, বরং মায়ের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি এবং আপনার শিশু উভয়েই সুস্থ থাকতে পারবেন।

এ সময়ে আপনার কোনো উদ্বেগ বা প্রশ্ন থাকলে, দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ, প্রতিটি গর্ভাবস্থা অনন্য এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়াই সর্বোত্তম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইভিনিং বিডিতে কমেন্ট করুন

comment url